safe-onlineস্মার্টফোন সহ আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ইন্টারনেট এখন কমবেশি সবাই ব্যবহার করেন। নিজেকে মেলে ধরেন অনলাইনের দুনিয়ায়।

কিন্তু ইন্টারনেট যারা ব্যবহার করেন তারা এর ব্যাপারে কতটা সচেতন?

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন করতে শুরু থেকেই কাজ করছে বিশ্বের জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু টিপস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গুগলের এই টিপসগুলো অনলাইনে ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর তথ্যের নিরাপত্তা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা।

ব্রাউজার আপডেট
ব্রাউজার আপডেটের নোটিফিকেশন বিরক্তিকর মনে হলেও হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত আপডেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। পুরনো ব্রাউজারগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থায় ত্রুটি থাকে বলে হ্যাকারদের পক্ষে তথ্য চুরি করা খুব সহজ যায়। তাই সবসময়ই ব্রাউজারের আপডেটেড সংস্করণটি ব্যবহার করুন।

যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। অধিকাংশ সময় ব্যবহারকারীর ইমেইল ঠিকানা ‘পাবলিক’ করা। এর ফলে অনেক সময়ই ‘ভুয়া’ আর অপ্রয়োজনীয় মেইলের কারণে ভুগতে হয়। আর একেই বলে ‘স্প্যাম’।

জিমেইলের ক্ষেত্রে এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড
অনলাইনে সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের কোনো বিকল্প নেই। অনলাইনে প্রতিটি আলাদা সেবায় একটি পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এজন্য বিভিন্ন পাসওয়ার্ড ম্যানেজিং সফটওয়্যারের সাহায্য নিন।

ডিভাইসের নিজস্ব নিরাপত্তা
নিজের মোবাইল ডিভাইসে পিন বা পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে গুগল। অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের হাত থেকে ডিভাইস নিরাপদ রাখতে এই সিকিউরিটি সিস্টেমগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

ভেরিফিকেশন
‘টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন’ ফিচার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে গুগল। এই পদ্ধতিতে সঠিক ব্যবহারকারী শনাক্ত করার জন্য ‘ভেরিফিকেশন কোড’ ব্যবহার করে গুগল। যেকোনো অপরিচিত ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সময় ‘ভেরিফিকেশন কোড’-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি অ্যাকাউন্টের মালিকানা যাচাই করে।

জিমেইলে ডট যোগ করুন
আপনার জিমেইল আইডিতে একটি অতিরিক্ত ডট যোগ করে আইডি পাবলিক করে রাখতে পারেন। এর ফলে অপরিচিত মেইল বা স্প্যামে ব্যবহারকারীর ইনবক্স ভরবে না।

ধরুন আপনার জিমেইল আইডি যদি [email protected] হয়, তবে আপনার ইমেইল আইডি পাবলিক করে দেয়ার সময় [email protected] একটি অতিরিক্ত ডট যোগ করে দিতে পারেন।

আপনার জিমেইল ইনবক্সের বাম পাশে মোর লেবেল অপশনে ক্লিক করে নতুন লেবেল তৈরি করতে পারবেন। ভবিষ্যতের পাবলিক ইমেইলগুলোর জন্য নতুন লেবেল তৈরি করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এরপর একটি ফিল্টার তৈরি করুন, যা আপনার ইমেইল অ্যাড্রেসে আসা সব ই-মেইল থেকে অতিরিক্ত ডটযুক্ত মেইল বাছাই করে ব্যবহারকারীর তৈরি নতুন লেবেলে পাঠাবে।

ফিল্টার তৈরি করতে সেটিংস মেনুতে গিয়ে স্ক্রিনের ডান পাশের ওপরে চাকার মতো দেখতে আইকনে ক্লিক করুন। এরপর ‘সেটিংস’-এ ক্লিক করে স্ক্রিনের ওপরে ‘ফিল্টারস’ লেখা ট্যাবে ক্লিক করে ‘ক্রিয়েট নিউ ফিল্টার’-এ ক্লিক করুন।

আপনার ডটযুক্ত ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে স্ক্রিনের নিচে ডান পাশে ‘ক্রিয়েট ফিল্টার উইথ দিস সার্চ’ অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তী স্ক্রিনে ‘স্কিপ দ্য ইনবক্স’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর ‘অ্যাপ্লাই দ্য লেবেল’ বক্স চেক করে ব্যবহারকারীর ‘পাবলিক ইমেইল’ লেবেলে ক্লিক করে ‘ক্রিয়েট ফিল্টার’ লেখায় ক্লিক করলেই কাজ শেষ হবে।

ব্যবহারকারীর ‘পাবলিক মেইল’ ফোল্ডারে আসা ইমেইলগুলো দেখতে প্রথমে ‘মোর লেবেলস’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। কেউ যদি পাবলিক জিমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে ইনবক্সে আসা কোনো মেইল সরাতে চান, তাহলে ওই মেইলটিতে রাইট ক্লিক করলেই মেইলটি সরানোর অপশন পাবেন।

‘রিপোর্ট’ করুন
কোনো সন্দেহজনক কন্টেন্ট পেলে সাথে সাথেই রিপোর্ট করুন। এ ব্যাপারগুলোর ওপর নজরদারির জন্য নিজস্ব কর্মী আছে গুগলের। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবহারকারীর জন্যও ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে এই পদক্ষেপ।

বিকল্প ব্যবস্থা
প্রত্যেকটি অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড মনে রাখা বেশ কঠিন কাজ। আবার একই পাসওয়ার্ড অনেক দিন ধরে ব্যবহার করাটাও নিরাপদ নয়। চলতি সপ্তাহে ইয়াহু আর মাইক্রোসফট দিয়েছে দুটি বিকল্প ব্যবস্থা।

প্রতিবার লগ-ইন করার সময় ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোনে পাঠাবে ইয়াহু। যদিও হ্যাকারদের জন্য ইয়াহু অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা আরো সহজ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবহারকারীর মোবাইল চুরি হলে ক্ষণস্থায়ী ওই পাসওয়ার্ডগুলোও চোরের হাতে পড়বে।

ফোন আনলক করতে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার সুবিধা থাকলেও অনেক ব্যবহারকারীই তা ব্যবহার করেন না। এ ছাড়া ইয়াহুর ‘অন ডিমান্ড’ পাসওয়ার্ড সাইটির আগের টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সিস্টেম থেকে একধাপ পিছিয়ে। কারণ, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সিস্টেমে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে অ্যাকাউন্ট ইনফর্মেশন এবং ওই ব্যক্তির ফোন দুটিই হাত করতে হবে হ্যাকারকে।

ইয়াহুর নিরাপত্তা প্রধান এলেক্স স্টামোস বলেন, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সিস্টেম বেশি নিরাপদ হলেও অনেক ব্যবহারকারীই এর বদলে সহজ এবং ছোট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। যেহেতু বেশির ভাগ অনলাইন সার্ভিসের পাসওয়ার্ড রিসেট করার ক্ষেত্রে মোবাইলে মেসেজ বা ইমেইল পাঠানোর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, ফলে ব্যবহারকারীরা তাদের ফোন হারালে ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন।

মাইক্রোসফটের নতুন অপারেটিং সিস্টেস উইন্ডোজ ১০-এ আসছে ফেসিয়াল রিকোগনিশন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন ফিচার। ব্যবহারকারী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পদ্ধতিগুলো পেয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ব্যবহারকারীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেইস স্ক্যান করে লগ-ইন করার বিষয়টি একসময় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হলেও তা বাস্তব হতে চলেছে। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের পরবর্তী সংস্করণে ‘বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন’ প্রযুক্তি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে ব্যবহারকারীরা তাদের ফোন বা কম্পিউটার তাদের ফেইস স্ক্যান করার মাধ্যমে আনলক করা যাবে।

তবে ডিভাইসগুলোতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার এবং ইনফ্রারেড সেন্সরযুক্ত উন্নতমানের ক্যামেরা অবশ্যই থাকতে হবে। অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলোতে লগইন করতেও ব্যবহার করা যাবে ফিচারটি। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনগুলোতে ইতোমধ্যেই ‘ফেইস আনলক’ ফিচার ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে গুগল। অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের কয়েকটি স্মার্টফোনে আছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানের মাধ্যমে ফোন আনলক করার ফিচার।